-
- ফিচার, লিড নিউজ
- আমার রাজনীতি ভাবনা-সাইদুর রহমান সাঈফ
- আপডেট টাইম : December, 27, 2020, 10:38 pm
- 127
রাজনীতি নিয়ে দু-চার কথা বলব বলব করে অনেকদিন যাবৎ ভাবছি। তারপরও বলা হয়ে উঠেনি। একটি সুস্থ সমাজ বির্নিমাণে রাজনীতির ভূমিকা অপরিসীম। বলা যায় রাজনীতি ছাড়া সমাজ নিয়ে কাজ করতে চাওয়া একপ্রকার তলাবিহীন ঝুড়িতে মাছ রাখার মত কাজ হবে। রাজনীতি হল সকল নীতির মূল। শিক্ষানীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি অর্থাৎ অাধুনিক সমাজব্যবস্থায় এমন কোন নীতি নেই –যা রাজনীতির উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল নয়।
রাজনীতি হল সামাজিক দায়বদ্ধতা। অর্থাৎ আপনি, আমি কেউই এই সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বের হতে পারব না। তবে হ্যাঁ, আপনি যদি কোন গুহায় অথবা জঙ্গলে বাস করেন –তবে আপনাকে আমি সামাজিক দায়বদ্ধতার মধ্যে রাখতে রাজি নয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল সবার কি রাজনীতি করা উচিত কিনা? আপনারা বলতে পারেন আরে মিয়া!!! সবাই রাজনীতি করবে কেন??? কিছু এলিট শ্রেণির মানুষ পৃথিবীতে আসবে; তাদের শুধু রাজনীতি করা উচিত। বাকিরা শুধু শুনবে আর দেখবে, কি হচ্ছে ঘটনা অনুধাবন করবে। চোখ বুঝলেই দেখা যায় তথাকথিত এলিট শ্রেণি কারা? এই এলিট শ্রেণির লোকরা রাজনীতিকে টাকা কামানোর মেশিন মনে করে। জনগণের কল্যাণ করা এই শব্দযুগল যেন সমাজ থেকে বিদায় নিতে চলল। এই অবস্থা উত্তরণের প্রয়াস চাই।
তবে আমি বলব রাজনীতি প্রেক্ষাপট নিয়ে অনুধাবন শক্তি যাদের রয়েছে, দেশের প্রতি যাদের দরদ রয়েছে, যারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সুষম, কল্যাণকর রাষ্ট্র উপহার দিতে চায়, সেসব ব্যক্তি যে দলেরই হোক –তাদের অবশ্যই রাজনীতি করা উচিত।বর্তমানে অবস্থা এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে – যাদের রাজনীতি অনুধাবন শক্তি অর্থাৎ উপলব্ধি শক্তি নাই ; তারাই বর্তমানে রাজনীতি করতে চায় অথবা সমাজকে পরিচালনা করতে চায়!! এ সত্যিই সেলুকাস!! সেজন্য কারা দায়ী? এই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলব মধ্যবৃত্ত শ্রেণির মেধাবী বাস্তববাদী ভীরু টাইপের মানুষেরা দায়ী। সুশীল সমাজের জ্ঞানপাপীরা দায়ী। যারা টাকার বিনিময়ে সত্যকে মিথ্যা বলে এবং মিথ্যাকে সত্য বলে দাবি করে। তাদের নিজেরা উচ্চ শিক্ষিত হতে চায়। সুযোগ বুঝে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে চায়। পারিবারিকভাবে তারা অর্থ উপার্জন করতে চায়। রাজনীতি নিয়ে তারা কথা বলতে রাজী নয় ; আর তাই রাজনীতিটা হয়ে যাচ্ছে দেউলিয়াপনা।
একশ্রেণির সুশীল এবং এনজিও আশির দশকের পর থেকে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক প্রিন্টমিডিয়া জোরেশোরে প্রচার প্রপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে যে রাজনীতি করা হল মন্দ মানুষের কাজ!!! সেজন্য মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে রাজনীতিবিদ হওয়ার স্বপ্ন দেখে না ; সমাজকে পরিচালনা করবে সেই স্বপ্ন আর দেখে না। এসব মেধাবী মন মগজে প্রবেশ করেছে কিভাবে ডাক্তার -ইন্জিনিয়ার – সরকারি প্রথম সারির অফিসার- আমলা হবে, কিভাবে বেশি টাকা আয় করবে ইত্যাদি। এভাবেই ধীরে ধীরে নিঃরাজনীতিকরণ বা সুস্থধারার রাজনীতির পতনশীলতা শুরু হয়েছে।
আর এদিকে সমাজ পরিচালনা করবে মগজবিহীন চাটুকারীতার শীর্ষে অবস্থানকারী দূর্বৃত্তরা।যারফলে সমাজে একটি বার্তা পোঁছে দেওয়া হয়েছে– দূর্বৃত্তায়ন হল রাজনীতির অংশ। এমন হতে থাকলে দেশ এবং সমাজকে আরও মাসুল গুণতে হবে। শুধু দেশ এবং সমাজ কেন –শুধু চুপচাপ বসে বসে এমন তামাশা দেখেন যারা, আর ভাবেন আমি নিরাপদ, অথবা বিপদের কোন সম্ভাবনা নাই। আপনার জন্যই বিপদ অবধারিত। আর এই সম্ভাব্য বিপদ থেকে বাচঁতে সামাজিক অসঙ্গতির বিরুদ্ধে আপনার কথা বলা উচিত। আপনার রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি। তখন সামাজিক নীতি-নির্ধারণে আপনারও ভূমিকা থাকবে।
অনেকেই বলে রাজনীতিবিদ দেশপ্রেমিক হতে হবে। তাহলে প্রশ্ন হল দেশপ্রেমিক কে? সোজাসাপ্টা উত্তর হল- যারা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। নিজে সৎ কাজ করে এবং অন্যকে সৎ কাজে উৎসাহিত করে তারাই দেশপ্রেমিক নাগরিক। তারাই মানবহিতৈষী। তারাই সমাজের কল্যাণ চায়। এখন সময়ের দাবি হল, দেশপ্রেমিক মানুষরা জাগ্রত হওয়া –সমাজের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে। ভবিষ্যতে প্রজন্মকে শক্তিশালী, স্বনির্ভর এবং নিরাপদ বাংলাদেশ উপহার দিতে রাজনৈতিক দূর্বৃত্তায়ন থেকে দেশপ্রেমিক নাগরিকদের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি। পাশাপাশি মেধাবী শিক্ষার্থীরাও স্বপ্ন দেখা উচিত রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের। তাহলে দেশের অগ্রগতি হবে, সমাজের অগ্রগতি হবে।
আপনার রাজনৈতিক বিশ্বাসে ভিন্ন মত থাকতে পারে, আপনার আর্দশগত বিশ্বাস ভিন্ন থাকতে পারে। কিন্তু একজায়গায় আপনাকে একমত থাকতে হবে, তা হচ্ছে কেবল দেশকে ভালোবাসা, দেশের মানুষকে ভালোবাসা। দেশের সার্বভৌমত্বকে ভালোবাসা। তবে এই ভালোবাসার দোহায় দেশের সম্পদ লুটপাট করার অধিকার আপনার নাই। মানুষের সরলতাকে, মানুষের আবেগকে পুজিঁ করে রাজনীতি করার অধিকার আপনার নাই। নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য রাজনীতি করার অধিকার আপনার নেই। এই মন্ত্রে যারা দীক্ষিত হবেন –তারা রাজনীতি করেন, সমাজনীতি করেন, তাতে দেশের মঙ্গল হবে। দেশের মানুষের মঙ্গল হবে।
লেখক:
সাইদুর রহমান সাঈফ
প্রভাষক (ইংরেজী বিভাগ) হাজী আসমত কলেজ
Leave a Reply