//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js


কাতার এয়ারের কর্মকর্তাদের অন্যায় অভিযোগের কারণে নেদারল্যান্ড যেতে পারলেন না কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল

মো.আককাস আলী :
২০২১ সালে সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কতৃক জাতীয় যুব পুরষ্কার লাভ করেন নওগাঁর সাপাহারের কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা।তিনি ইউরোপের আম রপ্তানি রিলেটেড বায়ারদের সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত মিটিং এর উদ্দেশে নেদারল্যান্ড যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার (৫ আগষ্ট) কাতার এয়ারের কর্মকর্তরা আপত্তিকর ও অন্যায় অভিযোগের কারণে যেতে পারেননি বলে জানিয়েছেন তিনি।
সোহেল রানা নওগাঁর সাপাহার উপজেলার গোডাউনপাড়া গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর কিছুদিন চাকরি করেন। পরে চাকরি ছেড়ে ২০১৫ সালে শুরু করেন আম চাষ।তাঁর আমবাগানের জমির পরিমাণ ১০৫ বিঘা। রয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের আমগাছ।এ বাগান ছাড়াও জেলার পত্নীতলা উপজেলার রূপগ্রাম এলাকায় সোহেল রানার ৪০ বিঘা জমির আরেকটি আমবাগান রয়েছে।২০২১ সালে সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কতৃক জাতীয় যুব পুরষ্কার লাভ করেন। গত ২ বছর থেকে Global GAP মেনে আম উৎপাদন করে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনছেন।
কি ঘটেছিলো বিমানবন্দরে জানতে চাইলে তিনি  বলেন, ভিসা ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের জিআরসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজ যাচাই–বাছাই করে ভ্রমণের অনুমতি দিয়েছিল বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশ। বিমানে ওঠার আগে কাতার এয়ারওয়েজের লোকজন অভিযোগ করেন যে,আমার ভিসা জাল। ভিসা জালের কথা শুনে আমি ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে ছুটে আসি। তারা পুনরায় যাচাই–বাছাই করে আমাকে ভ্রমণের অনুমতি দিতে কাতার এয়ারওয়েজকে অনুরোধ করে। কিন্তু তারা না শুনে আমাকে ফেরত পাঠায়।
সম্ভাবনাময় কৃষি উদ্দোক্তা ঘটনার বর্ননা দিতে গিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি বলেন,আমি কাতার এয়ার ওয়েজে ৫ আগষ্ট ঢাকা-আমস্টারডাম টিকেট করি। ফ্লাইট ছিল ভোর সাড়ে ৪ টায়। ৪ আগষ্ট রাত পৌনে ১২ টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১ নং টার্মিনাল দিয়ে প্রবেশ করি।
এরপর বোর্ডিং পাস দেয়া শুরু হলে পাসপোর্ট, টিকেট, ভ্যাকসিন কার্ডসহ প্রয়োজনীয় কাগজ দেখিয়ে বোর্ডিং পাস সংগ্রহ করি এবং ল্যাগেজ জমা দিয়ে ইমিগ্রেশনে যাই। ইমিগ্রশেনে পাসপোর্ট, বোর্ডিং পাস, জিও কপিসহ সব ডকুমেন্ট জমা দিয়ে ইমিগ্রেশন সম্পূর্ণ করি। এরপর বিমানে উঠবার জন্য ৫ নং গেটে অপেক্ষা করতে থাকি।
নির্দিষ্ট সময়ে লাইনে দাঁড়িয়ে গেট পার হবার সময় কাতার এয়ার ওয়েজের দায়িত্বরত স্টাফ আমার পাসপোর্ট দেখে ভিসা জালিয়াতির অভিযোগ করে পাসপোর্ট, বোর্ডিং পাস রেখে দিয়ে পাশে দাঁড়াতে বলেন। আমি তাকে জিও কপি, এলওআই, রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্তির কথা বলি এবং আরও বলি আমি নিজ হাতে ভিসা পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছি, এখানে জালিয়াতির কোন সুযোগ নাই। এরপর তিনি শতশত যাত্রীর সামনে আমার সঙ্গে খারপ আচরণ করেন।
তিনি বলেন, আমি দ্রুত ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে গিয়ে ঘটনা বলি। আমার ইমিগ্রেশন করা কর্মকর্তা এসআই দেলোয়ার আমাকে নিয়ে কাতার এয়ারের কর্মকর্তার কাছ থেকে আমার পাসপোর্ট ও আমার যাবতীয় ডকুমেন্ট সঙ্গে নিয়ে বিমানবন্দরের ভিসা বিশেষজ্ঞ টিমের মাধ্যমে পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষ করে ভিসা সঠিক বলে মত দেয়।
এরপর বিমান ছাড়ার আগে এসআই আমাকে সঙ্গে নিয়ে ৫ নং গেটে কাতার এয়ারের স্টাফের কাছে ভিসা সঠিক বলে জানান এবং আমার বিমানে যাত্রার জন্য অনুরোধ করেন। কাতার এয়ারের কর্মকর্তাকে রাষ্ট্রীয় জিও, এলওআই, জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্তি, গণমাধ্যমে নানা প্রতিবেদনসব কিছু বলেন। এসব দেখে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কাতার এয়ার বিমান যাত্রা নাকচ করে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন ইনচার্জ বরাবর প্যাসেঞ্জার অফলোডের জন্য আবেদন করেন।
এর মধ্যে আমার ফ্লাইট ফ্লাই করে চলে যায়। ইমিগ্রেশন পুলিশ বহু চেষ্টা করে ব্যর্থ হবার পর কাতার এয়ারের আবেদনের প্রেক্ষিতে একটি জিডি করে আমার পাসপোর্টে ইমিগ্রেশন সিল বাতিল করেন। কাতার এয়ারের কর্মকর্তরা আপত্তিকর ও অন্যায় অভিযোগ তুলে আমাকে বিমানে উঠতে দেননি। অথচ বোর্ডিং কার্ড এবং ইমিগ্রেশন ছাড়পত্র শেষে একজন আন্তর্জাতিক যাত্রীর সাথে এ ধরনের ঘৃণ্য আচরণ আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন।
ইমিগ্রেশন আইন, আমার রাষ্ট্রীয় পুরষ্কার, মন্ত্রণালয়ের জিও, এলওআই, গণমাধ্যমের নানা প্রতিবেদন সব কিছুকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে আমার সঙ্গে কাতার এয়ার ওয়েজের এমন জঘন্য, নিন্দনীয় কাজের জন্য আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাই। বিমানে উঠবার আগে যাত্রা বাতিল করে কাতার এয়ার ওয়েজ আমার মানসম্মান হানির পাশাপাশি বড় ধরণের আর্থিক ক্ষতি, ইউরোপের অনেক বায়ারদের সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত মিটিং বাতিল হয়েছে। যা আম রপ্তানি রিলেটেট ছিল। ভিসা জালিয়াতির অভিযোগ করায় এতে করে আমাদের রাষ্ট্রীয় সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। আমি কাতার এয়ার ওয়েজের নিকট ক্ষতিপূরণ সহ এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। এই বিষয়ে আমি আইনগত ব্যবস্থা নিব। পাশাপাশি এই বিষয়ে নেদারল্যান্ডস অ্যাম্বাসির কাছে অভিযোগ করব বলে জানান প্রতিবেদকের নিকট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js
%d bloggers like this: