অনলাইন ডেস্কঃ
৯৫ রানে হারালো চতুর্থ উইকেট। জুটি একটা দাঁড়ালো বটে, তবে পরপর দুই ব্যাটসম্যানের বিদায়ে ইংল্যান্ডের স্কোর হয়ে গেল ১৬৮/৬। ২০০ রানে পড়লো সপ্তম উইকেট। ৩৩০ রান তাড়া করতে নামা ইংলিশদের হারটা তখন সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু স্যাম কারেন তা হতে দিলেন না। তার ব্যাটিং বীরত্বে একটা সময় গিয়ে ইংল্যান্ডের জয়ের পাল্লাই ভারি হয়ে যায়! যদিও ইতিহাস লিখতে পারেননি কারেন। শেষ ওভারের নাটকীয়তায় শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি ভারতই জিতে নিয়েছে। শ্বাসরুদ্ধকর তৃতীয় ওয়ানডে জিতে সিরিজটাও নিজেদের করে নিয়েছে বিরাট কোহলিরা।
ক্রিকেটপ্রেমীদের শ্বাসরুদ্ধকর এক ম্যাচ উপহার দিলেন ইংল্যান্ডের বাঁহাতি পেস বোলিং অলরাউন্ডার স্যাম কারান। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি হয়ে রইলেন এক ট্র্যাজিক হিরো। অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে দলকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়েও শেষপর্যন্ত মাত্র ৭ রানের জন্য হারতে হয়েছে স্যাম কারান তথা ইংল্যান্ড দলকে।
দীর্ঘ ৩৭ বছরের খরা কাটাতে দরকার ছিল ৩৩০ রান। দুইদিন আগে ৩৩৭ রান তাড়া করতে মাত্র ৪৩.৩ ওভার নিয়েছিল ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল। ফলে তাদের জন্য শেষ ম্যাচের ৩৩০ রান খুব একটা চ্যালেঞ্জিং হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু শুরুর দিকের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটি জেতা হলো না ইংলিশদের।
প্রথম দুই ম্যাচে দুই দলই একটি করে জেতায় শেষ ম্যাচটি হয়ে ওঠে সিরিজ নির্ধারণী। যেখানে আগে ব্যাট করে তিন ফিফটির সুবাদে ৩২৯ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় ভারত। জবাবে স্যাম কারানের বিশ্ব রেকর্ড অপরাজিত ৯৫ রানের ইনিংসের পরেও ৯ উইকেট হারিয়ে ৩২২ রানের বেশি করতে পারেনি ইংল্যান্ড।
ম্যাচ জেতার জন্য শেষ ৪ ওভারে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ৪১ রান, হাতে ছিল মাত্র ২ উইকেট। তবে আশার প্রতীক হয়ে খেলছিলেন ৬৭ রান করা কারান। শার্দুল ঠাকুরের করা ৪৭তম ওভারে ১৮ রান তুলে নেন তিনি। ফলে সমীকরণ দাঁড়ায় ১৮ বলে ২৩ রান। কিন্তু ভুবনেশ্বর কুমার ও হার্দিক পান্ডিয়ার করা পরের দুই ওভার থেকে ৯ রানের বেশি পায়নি।
যার ফলে শেষ ওভারে সমীকরণ দাঁড়ায় ৬ বলে ১৪ রান। প্রথম বলে নন স্ট্রাইক প্রান্তে পা পিছলে পড়ে যান কারান। ফলে দুই রানের বদলে হয় এক এবং রানআউট হন মার্ক উড। কারান আবার যখন স্ট্রাইক পান তখন ৪ বলে দরকার ছিল ১২ রান। কিন্তু নাটরাজনের করা সেই ওভারের পঞ্চম বলে বাউন্ডারি ব্যতীত আর কিছুই করতে পারেননি কারান। ফলে ভারত পায় ৭ রানের শ্বাসরুদ্ধকর জয়।
অথচ ভারতের জয় এতটা কঠিন হওয়ার কথা ছিল না। কেননা ওপরের সারির ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় মাত্র ১৬৮ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল ইংল্যান্ড। জনি বেয়ারস্টো ১, জেসন রয় ১৪, বেন স্টোকস ৩৫, ডেভিড মালান ৫০, জস বাটলার ১৫ ও লিয়াম লিভিংস্টোন ফেরেন ৩৬ রান করে।
খানিক আশার আলো জাগালেও দলীয় ২০০ রান হতেই আউট হয়ে যান ২৯ রান করা মঈন আলি। এরপর শুরু হয় কারানের একার লড়াই। অষ্টম উইকেটে আদিল রশিদকে নিয়ে গড়েন ৫৭ রানের জুটি। যেখানে রশিদের অবদান ১৯ রান। ব্যক্তিগত ২২ রানের সময় হার্দিক পান্ডিয়ার হাতে ক্যাচ দিয়েও জীবন পান কারান।
পরে আদিল রশিদ ফিরে গেলে মার্ক উডকে নিয়ে জয়ের লড়াই চালিয়ে নেন কারান। নবম উইকেট জুটিতে কারান ও উড মিলে যোগ করেন ৬০ রান। শেষ ওভারে দূর্ভাগ্যজনক রানআউটে এ জুটি ভাঙার ফলেই মূলত ম্যাচের দখল পেয়ে যায় ভারত এবং শেষপর্যন্ত জিতে নেয় ৭ রান। ক্যারিয়ারসেরা ব্যাটিংয়ে ৯৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছেন কারান।ভারতের পক্ষে বল হাতে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছেন শার্দুল ঠাকুর। এছাড়া ভুবনেশ্বর কুমারের ঝুলিতে গেছে ৩টি উইকেট।
এর আগে পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে (রোববার) শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটিতে টস জিতে ভারতকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠান ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলার। দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ানের ব্যাটে চড়ে উড়ন্ত সূচনা পেয়েছিল ভারত। কোনো উইকেট না হারিয়ে মাত্র ১৪ ওভারেই করে ফেলেছিল শতরান।
কিন্তু পরে আশানুরুপ ব্যাটিং করতে না পারায় শেষপর্যন্ত ৩২৯ রানে অলআউট হয়ে গেছে তারা। তখনও বাকি ছিল ইনিংসের ১০টি বল। আদিল রশিদের ঘূর্ণির সঙ্গে মার্ক উডের গতির কাছেই পরাস্ত হয়েছেন বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল, হার্দিক পান্ডিয়ারা। ফলে এখন ৩২৯ রান নিয়েই ফিল্ডিংয়ে নামতে হবে তাদের।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের ১৫তম ওভারে প্রথম উইকেট হারায় ভারত। আদিল রশিদের বলে সোজা বোল্ড হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন ৩৭ বলে ৩৭ রান করা রোহিত। নিজের পরের ওভারে ৫৬ বলে ৬৭ রান করা ধাওয়ানকেও ফেরান রশিদ। অধিনায়ক কোহলিকে বোকা বানান মঈন আলি। বোল্ড হওয়ার আগে কোহলি করতে পেরেছেন মাত্র ৭ রান।
বেশি কিছু করতে পারেননি লোকেশ রাহুলও। পাঁচ নম্বরে নেমে ১৮ বলে মাত্র ৭ রান করে ফেরত যান তিনি। তখন ২৪.২ ওভারে ১৫৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে রীতিমতো চাপে পড়ে যায় ভারত। সেখান থেকে হাল ধরেন হার্দিক পান্ডিয়া ও রিশাভ পান্ত। ইংলিশ বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলা করতে শুরু করেন দুজনে।
তাদের পঞ্চম উইকেট জুটিতে মাত্র ৭০ বলে আসে ৯৯ রান। ফলে রানরেট নিয়ে কখনও চিন্তা করতে হয়নি ভারতকে। দুর্দান্ত ব্যাটিং করা পান্ত থামেন ৬২ বলে ৫ চার ও ৪ ছয়ের মারে ৭৮ রানের ইনিংস খেলে। হার্দিককে ফেরান স্টোকস, ফেরার আগে পেস বোলিং অলরাউন্ডারের ব্যাট থেকে আসে ৪৪ বলে ৬৪ রান।
এরপর সপ্তম উইকেটে ফের ভালো কিছুর আশা জাগান শার্দুল ঠাকুর ও ক্রুনাল পান্ডিয়া। তারা দুজন মিলে ৩৬ বলে গড়েন ৪৫ রানের জুটি। ছোট ক্যামিও ইনিংসে ২১ বলে ৩০ রান করেন শার্দুল, ক্রুনাল খেলেন ৩৪ বলে ২৫ রানের ইনিংস। তবে শেষদিকে আর আশানুরুপ কিছু করতে পারেনি ভারত।ইনিংসের ৪৫.৫ ওভারে ৬ উইকেটে ৩২১ থেকে ৪৮.২ ওভারে অলআউট হয়ে গেছে স্বাগতিকরা। অর্থাৎ ১৫ বলের ব্যবধানে মাত্র ৮ রান করতেই শেষের ৪ উইকেট হারিয়েছে তারা। যার ফলে ইংল্যান্ডের জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৩০ রানের।
ইংলিশদের পক্ষে বল হাতে ৩৪ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়েছেন উড, রশিদের শিকার ২ উইকেট। এছাড়া মঈন আলি, বেন স্টোকস, স্যাম কারান, রিস টপলি ও লিয়াম লিভিংস্টোন নিয়েছেন ১টি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৪৮.২ ওভারে ৩২৯ (পান্ত ৭৮, ধাওয়ান ৬৭, পান্ডিয়া ৬৪, রোহিত ৩৭, শার্দূল ৩০, ক্রুনাল ২৫; উড ৩/৩৪, আদিল ২/৮১)।
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩২২/৯ (স্যাম কারেন ৯৫*, মালান ৫০, লিভিংস্টোন ৩৬, স্টোকস ৩৫, মঈন ২৯; শার্দূল ৪/৬৭, ভুবনেশ্বর ৩/৪২)।
ফল: ভারত ৮ রানে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ভারত ২-১ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: স্যাম কারেন।
সিরিজসেরা: জনি বেয়ারস্টো।
Leave a Reply